শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||
আশ্বিন ২০ ১৪৩১
|| ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ১ জানুয়ারি ২০১৯
আমরা সবাই কমবেশি ভুলে যাই। এই ভুলে যাওয়া কি সাধারণ কোনো ঘটনা, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো রোগ বা অসুখ? ডিমেনশিয়া নিয়ে কথা হলেই সবাই মনে করে, আমিও তো ভুলে যাই। তাহলে আমারও কি ডিমেনশিয়া হয়েছে?
যদিও আমরা প্রায়ই ভুলে যাই এবং তার মানে এই নয় যে সবার ডিমেনশিয়া আছে। তবে কেউ যদি প্রতিদিনের কাজগুলো করতে গিয়ে সমস্যা অনুভব করে তাহলে এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্তরা পরিকল্পনা করা, প্রয়োজনীয় কি কাজ করতে হবে কিংবা পরে কি করবেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা হারান। যেমন, এই রোগে আক্রান্তরা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছাতে পারেন না অথবা পেট্রোল পাম্পে জ্বালানি নিতে গিয়ে বিভ্রান্ত হন। অনেক সময় যাতায়াতের পরিচিত রাস্তা ভুলে গিয়ে হারিয়ে যান। তাহলে আসুন ভালো করে চিনে নিই ডিমেনশিয়াকে। ১. ডিমেনশিয়ার কারণে নিকটতম অতীতের স্মৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবার আগে। এ ধরণের রোগীরা অতীতের কথা খুব ভালোভাবে বলতে পারেন, কিন্তু একটু আগে কী করেছেন তা মনে করতে পারেন না। এ ছাড়াও দিন-তারিখ, সময় মনে করতে পারবেন না। একই কথা বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকেন। ২. দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনে সমস্যার সৃষ্টি হবে। যেমন- কোনো কিছু ভালো মতো পরিকল্পনা করার পরও তালগোল পাকিয়ে ফেলা বা বাড়ির রাস্তা ভুলে যাওয়া ইত্যাদি। ৩. ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হবে। মাঝে মাঝে সঠিক শব্দ খুঁজে পাবেন না বা কথার খেই হারিয়ে ফেলবেন। এমনকি উত্তেজিত হয়ে যেতে পারেন। ৪. ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির স্থান ও সময় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে। আজ মাসের কত তারিখ বা কী বার এটা তারা বলতে পারবেন না। এমনকি নিজের ঘরকেও অপরিচিত মনে হতে পারে। ৫. ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন এবং তিনি যা ভাবছেন সেটাকেই সঠিক বলে মনে করবেন। এটা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে মনোমালিন্য তৈরি হতে পারে। ৬. ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি গণনা করা ভুলে যাবেন। টাকা-পয়সা বা অন্যান্য হিসাব তারা রাখতে পারবেন না বা ভুল করবেন। লেনদেনের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি দেখা দেবে। ৭. ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র খুঁজে পাবেন না যেমন- মানিব্যাগ, দলিলপত্র। তারা নিজেরা লুকিয়ে রাখবেন কিন্তু ভুলে যাবেন যে কোথায় রেখেছেন। ৮. হঠাৎ মুড পরিবর্তন হওয়া এ রোগের আরেকটি লক্ষণ। রেগে যাওয়া, কারণ ছাড়া মন খারাপ করা, ডিপ্রেশনে ভোগা, এ ছাড়াও আচার-ব্যবহারে পরিবর্তন আসতে পারে। ৯. ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আসা। যেমন- হাসিখুশি মানুষটি হঠাৎ গম্ভীর ও বদরাগী হয়ে যেতে পারেন। আগে অনেক মিশুক ছিলেন এখন একেবারে চুপচাপ। ১০. আমরা সবাই মাঝে মাঝে একঘেয়েমিতে ভুগি, আবার ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো কিছু করার প্রতি আগ্রহ বা উৎসাহ থাকে না। উপরের এক বা একের বেশি কারণ যদি কোনো মানুষের মাঝে দেখা যায় তাহলে দেরি না করে নিওরোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তবে মানসিকভাবে সক্রিয় থাকলে এ রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব বলে মনে করেন বিষেজ্ঞরা। তাই এই রোগ থেকে বাঁচতে-
১. মস্তিষ্ককে সজাগ রাখুন। এজন্য নিয়মিত সংবাদপত্র আর গল্পের বই পডুন, বিভিন্ন পাজল বা ধাঁধা খেলুন নিজে নিজেই। নিজেকে গুটিয়ে না রেখে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যান। সবার সঙ্গে মেলামেশা করুন। ২. নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। বয়স বার্ধক্যের দিকে এগোতে থাকলে নিয়মিত হাঁটুন। ওজন কখনো বাড়তে দেবেন না। কারণ অতিরিক্ত ওজনে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। আর ডায়াবেটিস থেকে এই ভুলে যাওয়া রোগ বেশি হয়। ৩. উচ্চ রক্তচাপ আর কোলেস্টেরল নিয়মিত পরীক্ষা করান। নিয়মিত চিকিৎসা করান, ওষুধ খান এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ৪. ভুলে যেতে থাকলে তালিকা বানিয়ে সব কাজ করুন। কাজটি সম্পন্ন হয়ে গেলে তার পাশে মার্ক করে দিন। এতে আর মনে থাকা নিয়ে বিপদে পড়বেন না। ৫. রাতের বেলা ঘুমানোর আগে সারাদিনের ঘটনাগুলো মনে করুন। সবচেয়ে ভালো হয় ডায়েরি লেখার অভ্যাস করলে। এতে নিয়মিত লেখার চর্চা থাকবে, সব মনেও থাকবে। ৬. সবসময় চেষ্টা করুন মন খুলে হাসতে। হাসি মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে। ফলে মস্তিষ্ক সহজেই সব কিছু মনে রাখতে পারে। ৭. স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে পুষ্টিকর, স্বাস্থসম্মত খাবার খান। প্রতিদিন ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার খান। নিয়মিত সবুজ শাকসবজি, শস্য, আপেল ম্যাগনেসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে। সামুদ্রিক মাছ খান। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবারও খান। অন্য চায়ের চেয়ে গ্রিন টি বেশি কার্যকর। আর অবশ্যই যাবতীয় অ্যালকোহলজাতীয় নেশার অভ্যাস বাদ দিন।
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়