শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||
আশ্বিন ২০ ১৪৩১
|| ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২১
বাংলা ভাষার আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার পর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দেওয়ায়, ১৯৪৯ সালের ১৯ এপ্রিল শেখ মুজিবকে আবারো গ্রেফতার করা হয়। মূলত ভাষা আন্দোলনে সামনে থেকে ভূমিকা রাখার কারণে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে পুলিশ। একারণে বিভিন্ন অযুহাতে কারাগারে নেওয়া হয় তাকে। এবার ছাত্রনেতা হিসেবে জেলে প্রবেশ করলেও, জেলখানাতেই তার ছাত্ররাজনীতির সমাপ্তি ঘটে। শেখ মুজিব জেলে থাকা অবস্থাতেই ২৩ জুন, কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডনে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী (মুসলিম) লীগ। শেখ মুজিবের নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিয়ে তাকে এই সংগঠনের প্রাতিষ্ঠাতা যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২৭ জুন তিনি আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা হিসেবে জেল থেকে বের হন।
এরপর সেপ্টেম্বর মাসে ছাত্রলীগের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় শেখ মুজিবের সভাপতিত্বে। তিনি ছাত্রলীগের নতুন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দেন। এরপর থেকে নিজে পুরোদমে মন দেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রসারে। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এই সংগঠনের সভাপতি ও শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক হলেও, দেশজুড়ে কর্মী সংগ্রহ ও দলীয় প্রচারণার কাজ করতে হয় শেখ মুজিবকে। এদিকে ভাষার অধিকার আদায়ের দাবিতে নিয়মিত ছাত্রলীগ নেতাদেরও নির্দেশনা দিতে থাকেন তিনি।
এরমধ্যেই, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে, ১৯৪৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার আরমানিটোলায় জনসমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। সভা শেষে ভুখা মিছিল থেকে দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার এড়িয়ে দলীয় কার্যক্রমের পরিসর বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিব পশ্চিম পাকিস্তানে যান সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে দেখা করতে। তিনি পূর্ব-বাংলায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন বেগবান করার জন্য সোহরাওয়ার্দীকে রাজি করান। এরপর ঢাকায় ফেরার পর তাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় গ্রেফতারে ভয়ে পদত্যাগ করেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। অনেকে নিস্ক্রিয় হয়ে যান। ফলে নিজের দূরদর্শিতা এবং নেতৃত্বগুণে মাত্র ৩০ বছর বয়সেই দলের অপরিহার্য মুখ হয়ে পড়েন শেখ মুজিবুর রহমান। তার কথায় মুগ্ধ হয়ে ১৯৫০ সালের ১৮ ও ১৯ মার্চ নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন অখণ্ড বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীন সোহরাওয়ার্দী। পুরো পাকিস্তানজুড়ে একটি রাজনৈতিক আবহ সৃষ্টি হয়। শেখ মুজিবের উদ্যোগে প্রাদেশিক দল থেকে পুরো পাকিস্তানের জাতীয় দলে পরিণত হয় আওয়ামী লীগ।
এমনকি পরবর্তীতে শেখ মুজিবের ওপর আস্থা রেখে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রচারণায় সহায়তার জন্য ইত্তেফাক পত্রিকার জন্য রামকৃষ্ণ মিশন রোডে একটি অফিস কিনে দেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। একটা ট্রাস্টের মাধ্যমে পত্রিকা চলতে থাকে। শেখ মুজিব ছিলেন এই ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য।
এইদফায় গ্রেফতার করে ২৬ মাস জেলে রাখা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৯৫২ সালের এপ্রিলে জেল থেকে বের হয়ে দেশের অধিকাংশ জেলায় রাজনৈতিক সফর করেন তিনি। দলের সভাপতি ভাসানী যেহেতু তখনো বন্দি, তাই প্রায় চার মাসজুড়ে নিরলস পরিশ্রম করে সারাদেশের কমিটি পুনর্গঠন করেন তরুণ নেতা শেখ মুজিব। মাত্র ৩২ বছর বয়সে দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের পোস্টারে পরিণত হন তিনি।
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়