বৃহস্পতিবার ০৪ জুলাই ২০২৪ ||
আষাঢ় ১৯ ১৪৩১
|| ২৬ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০১৮
পাকিস্তানের ফর্মুলায় অসংখ্য চক্রান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান। বলা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার লাশের ওপর দিয়েই ক্ষমতায় আসেন ষড়যন্ত্রকারী জিয়া। একথা আজ দিবালোকের মতোই স্পষ্ট যে, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে থেকেই জিয়া পাকিস্তানের অনুগত ছিলেন। সেসময় থেকেই জীবদ্দশায় বাংলাদেশবিরোধী সকল ষড়যন্ত্রে সরাসরি জড়িত ছিলেন তিনি। ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশবিরোধী রাজাকার-দালালদের প্রতিদান দিতেও ভুল করেননি বাংলার দ্বিতীয় মীরজাফরখ্যাত জিয়া।
১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চক্র এক আদেশে ১৯৭২ সালের দালাল আইন বাতিল করে। এরপর Second Proclamation Order No. 3 of 1975-এর প্রথম তফসিল থেকে বাংলাদেশ দালাল আইনের যে সেফগার্ড ছিল তা তুলে দেওয়া হয়।
দালাল আইনে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি এক অধ্যাদেশ জারি করে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী দালালদের বিচারের জন্য সারাদেশে ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
এরপর বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। তবে জিয়াউর রহমান দালাল আইন বাতিল করে ১১ হাজার সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেন। ১৯৭৬ সালের ১৮ জানুয়ারি দেশত্যাগী পাকিস্তানি নাগরিকদের নাগরিকত্ব ফেরত পাবার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলা হয়। ১৯৭৬ সালের ৩ মার্চ জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলণ্ঠিত করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ঘোষণা করেন। ১৯৭৬ সালের ৩ মে জিয়াউর রহমান সংবিধানের ৩৮নং অনুচ্ছেদ বাতিল করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির নষ্টপথ উন্মোচন করেন। Second Proclamation Order No. 3 of 1976 জারি করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের শর্তাবলী তুলে দেওয়া হয়। Second Proclamation জারি করে সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদ তুলে দিয়ে দালালদের ভোটার হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। যা ১৯৭৭ সালের ২২ এপ্রিল সংবিধানের নবম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনে পরিণত করেন জিয়াউর রহমান। Proclamation No. 1 of 1977 জারি করে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে সংবিধানের কিছু অংশ তুলে দেওয়া হয়। যার ফলে স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগ, জামাতে ইসলাম, পিডিপি, নেজামে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক উগ্রসাম্প্রদায়িক দলসমূহ তৎপরতা শুরু করে। পুনর্বাসিত হয় যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। জিয়া কুখ্যাত স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানান। এই শাহ আজিজুর রহমান ’৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে গিয়ে বলেছিল, ‘পাকিস্তানি সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে অন্যায় কিছু করেনি। স্বাধীনতা নামে সেখানে যা চলছে, তা হলো ভারতের মদদপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের উচিত সেটাকে পাকিস্তানের ঘরোয়া ব্যাপার হিসেবে গ্রহণ করা।’ জিয়ার মন্ত্রিসভায় আরও বেশ কয়েকজন রাজাকার ছিলেন। এরা হলেন মসিউর রহমান, সামসুল হুদা, মির্জা গোলাম হাফিজ, শফিউল আলম, আবদুল আলিম, আবদুর রহমান বিশ্বাস। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আবদুল আলিম, মসিউর রহমান, শাহ আজিজুর রহমানকে পাকিস্তানের দালাল হিসেবে জেলে পাঠানো হয়েছিল। মসিউর রহমান পাকিস্তান সরকারের ঠিকাদার ছিলেন। সামসুল হুদা ছিলেন পাকিস্তান বেতারের একজন প্রযোজক। সে সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাক বেতার থেকে কতগুলো অনুষ্ঠান প্রচার করেছিলেন। মির্জা গোলাম হাফিজ ছিলেন পাকিস্তান চীন মৈত্রী সমিতির সভাপতি। তিনি বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী প্রচার চালাতেন। তিনি তার বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের এই তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ আসলে একটা ভারতীয় ষড়যন্ত্র। ১৯৭৮ সালের ১১ জুলাই পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে গোলাম আজম ঢাকায় আসেন তিন মাসের ভিসা নিয়ে। তার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও জিয়া সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গোলাম আজম আড়ালে থেকে বাংলাদেশবিরোধী কাজ চালিয়ে যান। একসময় গোলাম আজমকে জামায়াতের আমির বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। জিয়া জাতীয় সংসদে যেমন মুক্তিযোদ্ধা আর পাকিস্তানি দালালদের একই আসনে বসান তেমনি মুক্তিযুদ্ধের প্রণোদনা স্বরূপ ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিকে জিন্দাবাদে পরিণত করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চালাতে থাকেন। জিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন।
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়